'প্রতিটি জায়গায় নিজেদের লোক বসিয়েছে জামায়াত'

হেফাজতে ইসলামের মূল নেতাদের অধিকাংশ দেওবন্দের ধারার লোক। তাদের সিলসিলা অনুযায়ী জামায়াতের সঙ্গে সংগঠনটির সাপে-নেউলে সম্পর্ক। আমাদের দেশের অধিকাংশ ইসলামিক মুভমেন্টই জামায়াতের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখানে অনেক বড় ষড়যন্ত্র হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ইসলামকে স্থাপন করা হয়েছে। এ কাজে বিএনপিকেও ব্যবহার করা হয়েছে। সারা দেশে একটা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। মূলত প্রতিটা জায়গায় জামায়াত তাদের লোক বসিয়েছে। পাকিস্তানে যেমন আইএসআই থেকে শুরু করে প্রশাসনের সব স্তরে জামায়াত তাদের লোক ঢুকিয়েছে, আমাদের এখানেও একই কাজ করেছে। বিপুল অর্থ তারা এখানে ব্যয় করছে। শুক্রবার চ্যানেল আইর 'তৃতীয় মাত্রা' অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মনজুরুল আহসান খান এসব কথা বলেন। জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম।

সিপিবি সভাপতি বলেন, হেফাজতে ইসলাদের দাবি অনুযায়ী তারা অরাজনৈতিক সংগঠন। কিন্তু যে সময়ে, যে প্রেক্ষাপটে তারা আন্দোলনটা শুরু করল, তাতে একটা পলিটিক্যাল মুভমেন্টের সবকিছুই এতে ছিল এবং এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনেও একই কাজ হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, এটি ইসলামকে ধ্বংস করতে করা হচ্ছে। একাত্তরেও 'ইসলাম গেল, ইসলাম গেল' রব তোলা হয়েছিল। তিনি বলেন, শাহবাগ মঞ্চ থেকে একদিন একটা শব্দও ইসলাম বা অন্য কোনো ধর্ম সম্পর্কে উচ্চারিত হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় কয়েকজন ব্লগার কী লিখেছে, সে দায়দায়িত্ব শাহবাগের নয়। কিছু ফেক অ্যাকাউন্ট করেও এটি করা হয়েছে। আমাদের দেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। দেশকে বিভক্ত করার চেষ্টা হয়েছে। এটি আগেও হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা টেকেনি। মনজুরুল আহসান খান বলেন, ৪২ বছর ধরে আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে রাজনীতি হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি যেভাবে বেইমানি করা হয়েছে এরই প্রতিবাদের একটা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে কাদের মোল্লার রায়ের পর। গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের বিক্ষোভ একদিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে। অন্যদিকে যারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে টালবাহানা করছে তাদের বিরুদ্ধে। ১৯৯২ সালে শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে এমন আন্দোলন হয়েছিল। তখন বিট্রে করে জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করে আওয়ামী লীগ। ফলে আন্দোলনটা থেমে যায়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেও যুদ্ধাপরাধীর বিচার করেনি। পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পর জামায়াত অটোমেটিক্যালি বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু শেখ হাসিনা অপ্রয়োজনীয়ভাবে পঞ্চদশ সংশোধনী করলেন। বাহাত্তরের সংবিধানে না গিয়ে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সংশোধনী রেখে দিলেন। নিজে মুখে বললেন তিনি কোনো দলকে নিষিদ্ধ করবেন না। এভাবেই বিভিন্ন সময় জাতির সঙ্গে বিট্রে করা হয়েছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সিপিবি নেতা বলেন, বলা হয় আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মার্শাল ল'র সঙ্গে তুলনা করলে ঠিক আছে। কিন্তু বাস্তবে গণতন্ত্র বলতে যা বোঝায় তা এ দেশে গড়ে ওঠেনি। সংঘাত, সংঘর্ষ, হত্যা, খুন যা শুরু হয়েছে তা গণতন্ত্রের লক্ষণ নয়। যারা সরকারি দলে বা বিরোধী দলে আছেন তাদের নিজের দলের মধ্যেও গণতন্ত্রের চর্চা নেই। অন্য দলগুলোর সঙ্গে আন্তঃসম্পর্কের ক্ষেত্রেও কোনো গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি নেই। এর কারণ আমাদের এখানে অর্থ-সম্পদ সঞ্চয়ের একমাত্র পথ দুর্নীতি ও লুটপাট। আর রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকেই সহজে লুটপাট করা যায়। তাই সবাই ক্ষমতায় থাকা আর যাওয়ার চিন্তায় মগ্ন। কেউ কোনো গণতান্ত্রিক পদ্ধতির পরোয়া করে না। যার ফলে আজ ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সমাজে ছড়িয়ে থাকা বিপুল পরিমাণ কালো টাকা এখন ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।