'রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে'

রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের চেয়ে এই মুহূর্তে দেশের ক্ষতিটাই বেশি হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর উনি তো আর আওয়ামী লীগের ছিলেন না। আওয়ামী লীগের ক্ষতির বিষয়ও নেই। কিন্তু জাতীয়ভাবে একজন অভিভাবক হারালাম। দেশে যে রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সেই প্রেক্ষাপটে সর্বজন গ্রহণযোগ্য মানুষ হিসেবে তিনি ভূমিকা নিলে হয়তো একটা সমঝোতায় পৌঁছানোর সুযোগ ছিল। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার চ্যানেল আইর টকশো 'তৃতীয় মাত্রা'-এ সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এসব কথা বলেন।

জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় প্রবীণ এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ছিলেন অজাতশত্রু। রাজনৈতিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে তার কোনো শত্রু আছে বলে আমার ধারণা নেই। নিন্দনীয় কোনো কাজ তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে করেননি। কারও প্রতি তার বিষোদগার ছিল না। তার প্রতিও কারও বিষোদগার ছিল না। এ জন্যই রাজনীতিতে একজন শুদ্ধ মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। রাষ্ট্রপতি হয়েও তিনি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন।

নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সাজেশন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কাজ করবেন। কিন্তু উনি চেষ্টা করেছেন সব গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের পরামর্শমতো নির্বাচন কমিশন হোক। তাই সাংবিধানিকভাবে বিভিন্ন জায়গায় যে সব প্রধানরা আছেন তাদের নিয়ে একটা সার্চ কমিটি গঠন করেন। নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে তার প্রতি সবারই আস্থা ছিল। যে কারণে নির্বাচন কমিশন বা অন্যদের ডাকে বিরোধী দল না গেলেও রাষ্ট্রপতি সংলাপে ডাকলে ঠিকই বিরোধীদলীয় নেতা গিয়েছিলেন। সেখানে জাতির এ সংকটময় মুহূর্তে তার এ তিরোধানে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

আমু বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় স্ত্রীকে হারানো, পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় শেষ সময়ে তিনি অনেকটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। দেখা হলেই সবাইকে যেতে বলতেন। কথা বলতে চাইতেন সবার সঙ্গে। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, কোনো কুটিল রাজনীতিতে জিল্লুর রহমানের অংশগ্রহণ ছিল না। নীতির প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন। বাইরে এটা প্রকাশ করতেন না, ভেতরে লালন করতেন।তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে বঙ্গবন্ধুর সময় দুবার দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও তার হাতে দুবার দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার মধ্যে কোনো অহমিকা ছিল না। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে আমার নামটা ছিল। তিনি নির্বাচিত হয়েই আমার বাসায় গিয়ে বলেছেন, আপনিই কাজ করবেন, আমি সহায়তা করব। এটা তো অসাধারণ ব্যাপার।ওয়ান-ইলেভেনের সময় তার ভূমিকা ভোলার নয়। তার দক্ষ ভূমিকায় তখন বিএনপি ভাঙলেও আওয়ামী লীগে কোনো ভাঙন ধরেনি। কারও কান কথায় পাত্তা না দিয়ে আমাদের সবাইকে নিয়ে তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কখনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেননি।

বিরোধীদলীয় নেতার প্রশংসা করে এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, রাষ্ট্রপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তার বঙ্গভবনে যাওয়া, দলের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি প্রত্যাহার, শোক পালন প্রশংসার দাবিদার। রাজনীতিতে অনেক ভালো একটা দিক সামনে এসেছে। এই সংস্কৃতিটা পুনরুজ্জীবিত করা গেলে দেশের ৭৫ ভাগ রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। রাজনৈতিক যে অপসংস্কৃতি শুরু হয়েছে সেটা থেকে বেরিয়ে আসার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের এখন আলোচনা করে কীভাবে একটা পথ বের করা যায় তা দেখতে হবে।

Source: Bd-pratidin.com