'The whole country is collapsing'

স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেক দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার কথা। সেখানে রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশ আজ চরম অনিশ্চতায়। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। ইতোমধ্যে বহু জেলার ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। ডিসিরা জানাচ্ছেন তাদের প্রাণের নিরাপত্তা নেই। ব্যাংকগুলো অনিরাপত্তায়। আর নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বলছেন 'আমি সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি করব, সিটিজেন সেফটি সেন্টার করব, আপনারা চিনিয়ে দেবেন কারা কারা সন্ত্রাস করছে।' এতেই বোঝা যায় তিনি এখনো বাস্তবতায় নেই। যেন পুরো রাষ্ট্র ভেঙে পড়ছে আর নিরো বাঁশি বাজাচ্ছে। আমাদের তো সমস্যার গোড়ায় যেতে হবে। আমরা গণতান্ত্রিক রীতিচর্চা করছি না। সবার গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করেন। বিক্ষোভ-সমাবেশ করতে দেন। তখন বলেন, অন্যের জানমালের ক্ষতি করতে দেব না। তখন পুলিশও আইনের মধ্যে যে দায়িত্ব আছে তা পালন করবে। গত বৃহস্পতিবার চ্যানেল আই'র তৃতীয় মাত্রা অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার এ কথা বলেন। জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ জমির।

ফরহাদ মজহার বলেন, নূ্যনতম কিছু নীতি আমাদের সবাইকে মেনে চলতে হবে। জামায়াত ইসলামী বা শিবির আদর্শগতভাবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। আমার কাছেও গ্রহণযোগ্য ছিল না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অপরাধ তারা করেছে তা নিয়ে আমাদের মনে একটা ক্ষত আছে। তারপরও জনবিচ্ছিন্ন, ক্যাডারভিত্তিক এই দলটি হঠাৎ করে এভাবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে কেন? এর কারণ দলীয়করণে আমাদের বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ট্রাইব্যুনালেও তার প্রতিফলন ঘটেছে। মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা বোধহয় বিচারটা করতে চাইছে না। দ্বিতীয়ত, কাদের মোল্লার রায়ের পর তরুণরা যখন নেমে এলো এটাকে কেন্দ্র করে সরকারের সব প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করা, কিছু গণমাধ্যমে এটাকে অনেক বড় গণজাগরণ বলে প্রচার করা, রাত-দিন ফাঁসি ফাঁসি করা, মঞ্চ ঝুলিয়ে রাখা এগুলোর প্রভাবও জনগণের মধ্যে খুবই নেতিবাচকভাবে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে জামায়াত-শিবির যখন তাদের দিক থেকে বল প্রয়োগের দিকে গেল তখনই লোকজন তাদের পক্ষে চলে গেল। হরতালে জানমাল ক্ষতি করা, জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে ফেলা, শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা প্রসঙ্গে বলেন, ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি করা ঠিক নয়। তারপরও যেটা ঘটছে বিএনপিকে বা জামায়াতকে নিন্দা করলেও এখন কোনো লাভ হচ্ছে না। কারণ পুরো দেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ঘটে গেছে। বিএনপি যখন বিক্ষোভ-মিছিল করতে গেল সেখানে গুলি করার কী যুক্তি আছে? গণতান্ত্রিক রীতি আমাদের সবাইকে মানতে হবে। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা চলছে। গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ একটা নিরপেক্ষ জায়গায় থেকে দেশকে একটা সুশৃঙ্খল দিকে নিতে পারতেন। তা তারা করলেন না। কারও কাছে বাঙালি পরিচয় বড়, কারও কাছে ধর্মীয় পরিচয় বড়। এটা হতেই পারে। রাষ্ট্রকে দুইটাই সমান গুরুত্ব দিয়ে পালন করতে হবে। পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরের হামলা প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানটা গণতান্ত্রিক নয়। পঞ্চদশ সংশোধীর পর আরও গণতান্ত্রিক নয়। বাংলাদেশকে অবশ্যই একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের দিকে যেতে হবে। এটা করার ক্ষেত্রে যখনই বলবেন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, মানবিক অধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষমতা আইনপ্রণেতা, নির্বাহী ক্ষমতা এমনকি বিচার বিভাগের নেই আমি নিশ্চিত তখনই পুলিশের সঙ্গে মানুষের, রাজনীতিবিদদের ফুল দেওয়া শুরু হবে। শাহবাগের আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, সেখানে যদি ইতিবাচক কিছু হয়ে থাকে তার কিছু আর অবশিষ্ট নেই। এখন পুরোটাই রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা যত বেশি হবে মানুষকে ততই বিক্ষিপ্ত করে তুলবে। এটা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয়ের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনবে। এখানে সত্যিকার অর্থে ইসলামী একটা মিলিট্যান্ট রাজনীতি উত্থানের শর্ত তৈরি করছি।

Source Courtesy: Bangladesh Pratidin