৫০ প্রশ্নের মুখোমুখি তৃতীয়মাত্রা
খুবই সম্ভবÑ এমনই দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর। তারই অনুপ্রেরণায় তরুণ মিডিয়া কর্মী জিল্লুর রহমান চ্যানেল আইতে শুরু করেন দেশের প্রথম টকশো ভিত্তিক টিভি অনুষ্ঠান তৃতীয়মাত্রা। ২০০৩ সালের ১৭ জুলাই চ্যানেল আইতে অনুষ্ঠানটির প্রচার শুরু হয়। এখন অনুষ্ঠানটির বয়স ১৫ বছর। বাংলাদেশের ধারাবাহিক কোনো টকশোভিত্তিক টিভি অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটি একটি মাইলফলক। তৃতীয় মাত্রার শুভ জন্মদিন উপলক্ষে ৫০ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আনন্দ আলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন জিল্লুর রহমান। সঙ্গে ছিলেন আনন্দ আলোর সম্পাদক রেজানুর রহমান
প্রশ্ন: কোন ভাবনা থেকে অনুষ্ঠানটি শুরু করেছিলেন?
উত্তর: রাষ্ট্র ও সমাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই ছিল মূল লক্ষ্য। মানুষের চিন্তার জগৎকে প্রসারিত করার একটা চেষ্টাও মাথায় কাজ করেছে।
প্রশ্ন: অনুষ্ঠানের নাম তৃতীয় মাত্রা কেন?
উত্তর: বিশেষ কোন ভাবনা থেকে এই নাম নয়। এভাবেও বলা যেতে পারে, প্রথম ও দ্বিতীয়তেই যেন আমরা আটকে না থাকি। তৃতীয় মতটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মূলতঃ বহুমত, বহুপথকে মাথায় রেখেই এই নাম।
প্রশ্ন: প্রথম অনুষ্ঠান প্রচারের তারিখ
উত্তর: ১৭ জুলাই ২০০৩
প্রশ্ন: প্রথম অনুষ্ঠানে অতিথি কারা ছিলেন?
উত্তর: ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ।
প্রশ্ন: প্রথম অনুষ্ঠান প্রচারের অনুভূতি?
উত্তর: প্রথম প্রচারের পরই দর্শকরা যেভাবে অনুষ্ঠানটিকে গ্রহণ করেছিলেন তাতে যারপর নাই অবিভ‚ত হয়েছিলাম।
প্রশ্ন: অনুষ্ঠান ভালো হচ্ছে কে প্রথম বলেছিলেন?
উত্তর: বহুজন বলেছিলেন। তবে যার কথা আমি স্মরণ করতে পারি এবং যার মতামত আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল সেই শুরুর দিকে, তিনি সদ্য প্রয়াত সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক চৌধুরী।
প্রশ্ন: শুরুতে অনুষ্ঠানটি কতদিন চালানো সম্ভব ভেবেছিলেন?
উত্তর: আপনার প্রশ্নের আগে এই ভাবনাটা একবারও মাথায় আসেনি। তবে তৃতীয় মাত্রার পেছনের মূল ব্যক্তি বা শক্তি যিনি, ফরিদুর রেজা সাগর, তিনি আমাকে প্রথমে ৫০টি পর্ব পুন:প্রচার ছাড়া টানা করতে বলেছিলেন। ৫০ অতিক্রম করলে বলেছিলেন ১০০ পর্ব করতে। এরপর তো ইতিহাস, আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
প্রশ্ন: এক নাগাড়ে ১৫ বছর ধরে চলছে অনুষ্ঠানটি। এর পেছনে কোন প্রেরণা কাজ করছে?
উত্তর: গভীর রাতে আর দিনের বেলায় কাজের সময়ে মানুষ অনুষ্ঠানটি দেখছে। নারী-পুরুষ, সব বয়সের, সব শ্রেণি পেশার মানুষ অনুষ্ঠানটি গ্রহণ করেছেন। টানা ১৪ বছরে অনুষ্ঠানটির অবস্থানে একটুও হেরফের হয়নি। সারা পৃথিবী জুড়ে দর্শক। এর চেয়ে বড় প্রেরণা আর কি হতে পারে?
প্রশ্ন: এ যাবৎ কতজন অতিথি তৃতীয় মাত্রায় এসেছেন?
উত্তর: ৩৮৫২ জন
প্রশ্ন: পুরুষ মহিলার অনুপাত কেমন?
উত্তর: ৮৪:১৬
প্রশ্ন: পনের বছরে ১৫টি ভালো-মন্দ স্মৃতির কথা বলবেন?
উত্তর: ১. দেশের প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় মাত্রা দেখে আমাকে সরাসরি ফোন করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, নিঃসন্দেহে ভালো স্মৃতি।
২. কর্নেল রশীদের সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা যায়নি, এটি আমাকে ব্যথিত করেছে।
৩. তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে ২৭দিন তৃতীয় মাত্রা প্রচার করা যায়নি, যা ভালো লাগেনি।
৪. তৃতীয় মাত্রা রেকর্ডিং শেষ করে বাড়ি গিয়েই গ্রেফতার হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু, মন্দ স্মৃতি।
৫.তৃতীয় মাত্রা রেকর্ডিং শেষ করে বাড়ি গিয়েই মৃত্যুবরণ করেন এ কে ফায়জুল হক, কষ্টের স্মৃতি ।
৬. তৃতীয় মাত্রাই প্রথম অনুষ্ঠান যেটি বাংলাদেশি টেলিভিশনের পিক আওয়ার অফ পিক আওয়ার এর ধারণা ভেঙে দিয়েছে-অবশ্যই ভালো লাগার স্মৃতি।
৭. পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিরাই নয়, কোনো কোনো বিদেশিও যখন তৃতীয় মাত্রা সম্পর্কে জানেন দেখি, সেটি ভালো লাগে।
৮. তৃতীয় মাত্রা নিয়ে দেশের ভেতরে-বাইরে অনেকে গবেষণা করেছেন, দেখে ভালো লাগে।
৯. কোন অতিথিকে যখন অন্য অনুষ্ঠানে দেখেও দর্শকরা বলেন তৃতীয় মাত্রায় দেখেছেন, ব্যাপারটা খুবই মজার।
১০. যেসব অতিথিরা অন্য অনুষ্ঠানে যান কিন্তু তৃতীয় মাত্রায় আসেননি তারা যখন তাদের বাবা-মা বা পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে তৃতীয় মাত্রায় দেখতে চান-এ কথা জানিয়ে আমার অনুষ্ঠানে আসার কথা ব্যক্ত করেন, তখন ভালো লাগে।
১১. যেকোনো বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষ যখন আমাকে সহজেই চিনতে পারেন, ভালো লাগে।
১২. স্ত্রী, সন্তান, বাবা, বোন হাসপাতালে আমি তৃতীয় মাত্রার স্টুডিওতে, বুঝতেই পারেন।
১৩. মেয়ে, বাবা, বোন মারা গেছে-পেশাদারিত্ব আমাকে তৃতীয় মাত্রার চেয়ারে বসিয়েছে-এ সমন্বয় কতটা বেদনার বুঝানো লাগে না।
১৪. গভীর রাতে আশেপাশের বাড়ির টেলিভিশন সেট থেকে যখন তৃতীয় মাত্রার শব্দ ভেসে আসে, তখন ভালো লাগে।
১৫. বহুমানুষ আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু মানুষই আমার ন্যূনতম বিচ্যুতি মেনে নিতে পারে না।
প্রশ্ন: তৃতীয় মাত্রায় অংশ নিয়েছেন এমন কতজন বরেণ্য ব্যক্তি আর পৃথিবীতে নেই।
উত্তর: ৯৮ জন
প্রশ্ন: কোনো কারণে কী তৃতীয় মাত্রার প্রচার বন্ধ হয়েছিল? কেন?
উত্তর: ২০০৭-২০০৮ সালের সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় এই সরকারের নির্দেশে ২৭ দিন বন্ধ ছিল।
প্রশ্ন: তৃতীয় মাত্রায় আপনার ভ‚মিকা কি?
উত্তর: অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও পরিচালক আমি। সবাই জানেন। আমার পরিবারের বাইরে এই অনুষ্ঠানটি আমার জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে।
প্রশ্ন: প্রতিদিন একই ধরনের কাজ ক্লান্তি লাগে না?
উত্তর: না, একদমই লাগে না। কারণ আমি এক ধরনের কাজ করি না। প্রতিদিনই ভিন্ন ভিন্ন অতিথির সঙ্গে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কথা বলি। পৃথিবীর নাানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করছি। জ্ঞান আহরণের চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।
প্রশ্ন: টিভি অনুষ্ঠান হিসেবে তৃতীয় মাত্রা কতটা জনপ্রিয়?
উত্তর: সেটিতো আপনারা বলবেন, দর্শকরা বলবে। তবে এ যাবৎ ভালো যত গবেষণা-জরিপ হয়েছে তার সবকটিতেই তৃতীয় মাত্রা’র অবস্থান শীর্ষে। এক কথায় অপ্রতিদ্ব›দ্বী, ধারে কাছেও কেউ নেই।
প্রশ্ন: কয়েকদিন আগে এক অনুষ্ঠানে আপনি বলেছেন যেদিন অনুষ্ঠান হিসেবে তৃতীয় মাত্রা এক নম্বরে থাকবে না সেদিন অনুষ্ঠান ছেড়ে দিবেন? এটা যাচাই করবে কে?
উত্তর: আপনারা-দর্শকরা। নানা জরিপ-গবেষণা। আর আমার বিবেক বিবেচনার ওপর আমি যথেষ্ট আস্থাশীল।
প্রশ্ন: দীর্ঘ সময় এক নাগাড়ে একটি টিভি অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন দেখছেন? সেটা কেমন?
উত্তর: পরিবর্তনতো অনেক হয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন যেটা হয়েছে, সেটি হলো মানুষের সচেতনা অনেক বেড়েছে, বলা যায় চিন্তার জগতে এক আমূল বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। নীতি-নির্ধারকরা লেখাপড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় জীবনে অনেক নীতিগত পরিবর্তন হয়, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে।
প্রশ্ন: অনেকে বলেন তৃতীয় মাত্রা ঝগড়া জাতীয় একটি টিভি অনুষ্ঠান। আপনার অভিমত কী?
উত্তর: ঝগড়া আর বিতর্ক এক কথা নয়। তৃতীয় মাত্রায় বিতর্ক হয়। ঝগড়ার যে আবহের কথা অনেকে বলে থাকেন সেটি এখন কমে এসেছে। তৃতীয় মাত্রা অনেক পরিণত একটা অনুষ্ঠান।
প্রশ্ন: বিশেষ কোনো পর্বে অতিথিদের ঝগড়া কি আপনাকেও বিপাকে ফেলেছিল? বিস্তারিত বলবেন?
উত্তর: আমি পেশাদার, নির্মোহ এবং নিরাসক্ত একজন সঞ্চালক। এক্ষেত্রে আমাকে বিপাকে ফেলা খুব একটা সহজ না বরং আমি ওনাদের অনেকের সম্পর্ককে সহজ করে দিয়েছি।
প্রশ্ন: তৃতীয় মাত্রায় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অতিথিরা তর্ক করছেন। আপনি মাঝখানে বসে মিটিমিটি হাসছেন। এই হাসির অর্থ কি?
উত্তর: যে যখন যেভাবে বোঝেন। এই বোঝায় আমার কোনো ক্ষতি বৃদ্ধি নেই। হাজার হাজার ঘটনায় হেসেছি, কোন হাসির কথা বলবো।
প্রশ্ন: তৃতীয় মাত্রায় যে পর্ব প্রচার করা যায় নি কেন?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐে মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত আসামি কর্নেল আব্দুর রশীদ-এর ৫ পর্বের একটি সাক্ষাৎকার ২০০৭ সালের ৭ নভেম্বর প্রচার করা হয়েছিল। ১ম পর্বের পর বাকি ৪ পর্ব আর প্রচার করা যায়নি। এমনকি প্রথম পর্বটি রীতি অনুযায়ী পুন:প্রচারও করা যায়নি। সেই সময়ের ক্ষমতাবানরা এটি প্রচার করতে দেননি। এখানে দেশি-বিদেশী ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটেছে।
প্রশ্ন: তৃতীয় মাত্রার অনুকরণে দেশের বেশ কিছু টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনার অভিমত কি?
উত্তর: খারাপ কিছু নয়। আমি সবাইকে সাধুবাদ জানাই।
প্রশ্ন: অনুষ্ঠান প্রচারের পর সাধারণত: কে আগে ফোন করেন অথবা ভালো-মন্দ মন্তব্য করেন?
উত্তর: বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নজন। বহুমানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে।
প্রশ্ন: আচ্ছা, দেশের টেলিভিশন মাধ্যমে তৃতীয় মাত্রার মতো কোনো অনুষ্ঠান যদি না থাকতো তাহলে কি দেশের খুব ক্ষতি হতো? বিস্তারিত বলুন।
উত্তর: আমিতো কখনও কোথাও বলিনি যে, তৃতীয় মাত্রার কারণে দেশের অনেক উপকার হয়েছে। তবে সততার সঙ্গে বললে দেশের কোনো ক্ষতি হয়তো হতো না । কিন্তু বেশ কিছু ক্ষতি বোধহয় ঠেকানো গেছে।
প্রশ্ন: আপনি নিজে কি নিয়মিত তৃতীয় মাত্রা দেখেন?
উত্তর: আমি সারাক্ষণই তৃতীয় মাত্রার সঙ্গে, তৃতীয় মাত্রা’র মধ্যেই আছি।
প্রশ্ন: উপস্থাপক হিসেবে জিল্লুর রহমানকে কত নম্বর দিবেন?
উত্তর: নিজেকে নিজে নম্বর দেবো, তাও আবার পাবলিকলি, অতটা বোকা বোধহয় আমি নই।
প্রশ্ন: আপনি একজন দর্শক। তৃতীয় মাত্রার পরিচালক হিসেবে জিল্লুর রহমানের প্রতি আপনার কোনো পরামর্শ আছে?
উত্তর: যে ধারাটা তৃতীয় মাত্রা তৈরি করেছে, সেটি যেন ধরে রাখেন। আর অতিথি নির্ধারণে আরও একটু সতর্ক হোন।
প্রশ্ন: উপস্থাপক হিসেবে সুখকর স্মৃতি। তৃতীয় মাত্রার বিশেষ কোনো পর্ব প্রচারের পর আপনার কি অনেক আনন্দ হয়েছিল?
উত্তর: এরকম বহু পর্ব আছে, এই স্বল্প পরিসরে যা বলা যাবে না। তৃতীয় মাত্রার বহু গুরুত্বপূর্ণ অতিথি আছেন, যারা তৃতীয় মাত্রায় আসার পূর্বে বা পরে আর কোনো টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নেন নি। একটি সুখের স্মৃতি বলি, লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক বিবিসি’র নিউজ প্রেজেন্টর জেইন হিল আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ল্যারি কিং হিসেবে। আমি জেইনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলাম, আমি ল্যারি কিং-এর মতো অতো বড় কেউ নয়। আর প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন আমার সমন্ধে বলেন, ‘হি ইজ টু ইয়ং টু বি ল্যারি কিং। বাট রাইট অ্যাট দিস মোমেন্ট হি ইজ লাইক অ্যানড্রিউ মার’।
প্রশ্ন: একইভাবে বিশেষ কোনো পর্ব প্রচারের পর আপনি কি কষ্ট পেয়েছিলেন? চোখে পানি এসেছিল?
উত্তর: পর্ব প্রচারের পর নয়, কিছু পর্ব ধারণ কালেই চোখে পানি এসেছিল।
প্রশ্ন: তৃতীয় মাত্রায় সমাজের সুবিধা সম্পন্ন ব্যক্তিরাই কথা বলার সুযোগ পান। মাঝে মাঝে সাধারণ মানুষকেও তো হাজির করা যায়। আপনার মন্তব্য জানতে চাই।
উত্তর: জনপ্রতিনিধিরাই তো তৃতীয় মাত্রায় কথা বলেন।
প্রশ্ন: দেশ আপনার কাছে কী?
উত্তর: আমার আত্মপরিচয়। এটি একটি নীতি, দেশপ্রেম সেই নীতির পূর্ণ আনুগত্য।
প্রশ্ন: পরিবার আপনার কাছে কি?
উত্তর: অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, জিল্লুরের আছে শুধু পরিবার আর তৃতীয় মাত্রা। সত্যিই তাই, পরিবার আমার কাছে সবকিছু । পরিবার আমাকে স্বপ্ন দেখায়, বাঁচতে শেখায়, জীবনকে উপলব্ধি করার সুযোগ করে দিয়েছে।
প্রশ্ন: বন্ধুত্ব আপনার কাছে কী?
উত্তর: বন্ধুত্বের তো এখন নানা রকমের সংজ্ঞা রয়েছে। এক জীবনে একজন ভালো বন্ধু পাওয়া বিরল; পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে ‘ফারাজ’ হচ্ছে বন্ধুত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
প্রশ্ন: বন্ধুত্ব টিকে থাকে কিসে?
উত্তর: পারস্পরিক আস্থা, বিশ^াস ও নির্ভরতায়। সম্পর্ক হতে হবে খোলা আকাশের মতো।
প্রশ্ন: তৃতীয় মাত্রা ঘিরে ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা জানতে চাই।
উত্তর: আন্তর্জাতিক পরিমÐলে তৃতীয় মাত্রার পরিচিতি এবং অবস্থান সুনিশ্চিত করতে চাই।
প্রশ্ন: চ্যানেল আইতে সরাসরি প্রচার ছাড়াও কোন কোন মাধ্যমে ‘তৃতীয় মাত্রা’ দেখার সুযোগ রয়েছে।
উত্তর: তৃতীয় মাত্রার নিজস্ব ওয়েবসাইট www.tritiyiomatra.com থেকে। এর বাইরে ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার এবং গুগল প্লাস-এও তৃতীয় মাত্রা দেখা যায়।
প্রশ্ন: তৃতীয় মাত্রার কারণে দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আপনার বেশ সখ্যতা। অনুষ্ঠানে আপনি কি কখনও পক্ষপাতিত্ব করেন?
উত্তর: আমার নিরপেক্ষতাই তৃতীয় মাত্রার বড় একটা শক্তি। আমি সব সময় ভারসাম্য বজায় রেখে চলি। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সখ্যতার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
প্রশ্ন: টিভি অনুষ্ঠান হিসেবে তৃতীয় মাত্রার অর্জনগুলো কী কী?
উত্তর: তৃতীয় মাত্রা বাংলাদেশের প্রথম, প্রধান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টক শো। নিঃসন্দেহে প্রভাবশালী, দেশের ভেতরে এবং সীমানার বাইরে। পৃথিবীর বহু দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা তৃতীয় মাধ্যমেই বাংলাদেশকে দেখে, বোঝার চেষ্টা করে।
প্রশ্ন: তৃতীয় মাত্রার ওপর একটি পুস্তক প্রকাশের কথা শোনা গিয়েছিল। তার খবর কী?
উত্তর: টেলিভিশনকে বলা হয় ইরেজ মিডিয়া। আমার ইচ্ছে আছে তৃতীয় মাত্রার সব পর্বগুলোকে চার মলাটের মধ্যে বন্দি করা। কাজ চলছে।
প্রশ্ন: দেশে-বিদেশে আপনার তো অনেক ভক্ত। ভক্ত বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন কখনও?
উত্তর: ভক্তদের নিয়ে অনেক কথা আছে। আমি বরং এভাবে বলি আর দশ জন তারকার ভক্ত আর আমার ভক্তরা এক নয়। আমার ভক্তরা বিশ^াস করে তাদের জীবন-যাপনে, জীবনমান পরিবর্তনে আমার একটা ভ‚মিকা আছে, তারা আমাকে ভালোবাসেন।
প্রশ্ন: ঈদ উৎসব উপলক্ষে তৃতীয় মাত্রার বিশেষ সংস্করণ ‘ভালোবাসার বাংলাদেশ’ এ আপনি রাজনীতিবিদদের নানা চিত্র তুলে ধরেন। এ নিয়ে কোনো বিশেষ স্মৃতির কথা বলবেন?
উত্তর: অনেক স্মৃতি আছে। আজকের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু একবার আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আমি কি রাজনীতিবিদদের দিয়ে ঝাড়–ও দেওয়াবো কি-না? সত্যিটা হলো আমি তাদের দিয়ে অনেক কিছু করাতে পেরেছি। এতে তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।
প্রশ্ন: টিভি উপস্থাপক হিসেবে আপনি বেশ জনপ্রিয়। আপনার প্রিয় উপস্থাপক কে বা কারা?
উত্তর: টিম স্যাবেস্টাইন, ল্যারি কিং, অপরাহ উইনফ্রে, করন থাপার।
প্রশ্ন: একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানকে ঘিরে আপনার যত ব্যস্ততা। টক শো ছাড়া অন্যকোনো অনুষ্ঠান দেখেন? দেখলে কি ধরনের?
উত্তর: জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদে আমার আগ্রহ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচুর টক শো ও তথ্য চিত্র দেখি এর বাইরে অনেক ইংরেজি মুভি দেখি।
প্রশ্ন: আপনার অনুষ্ঠানে দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব পর্যায়ের অনেকে এসেছেন। দুই নেত্রীকে কখনও আপনার অনুষ্ঠানে দেখা যাবে?
উত্তর: আজ পর্যন্ত খুব একটা আশাবাদী নই। আবার শেষ কথা বলেও কিছু নেই।
প্রশ্ন: দেশে-বিদেশে তৃতীয় মাত্রার অসংখ্য ভক্ত রয়েছে। তাদের উদ্দেশে কিছু বলুন।
উত্তর: বাংলাদেশে জনসংখ্যা বাড়ছে ক্রমাগত কিন্তু মানুষের সংখ্যা কমছে। আমরা প্রত্যেকে যেন মানুষ হবার চেষ্টা করি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে যেন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন: জীবনে যা মেনে চলেন-
উত্তর: আমার দ্বারা কারো যেন কোনো ক্ষতি না হয়, আমি যেন কারো দীর্ঘশ^াসের কারণ না হই।
প্রশ্ন: জীবনে আপনার লক্ষ্য কী?
উত্তর: বিশ^াস করবেন কি না জানি না আমি আসলেই একজন বিখ্যাত বা খ্যাতিমান কেউ হতে চাই না। যা হতে চাই তা হলো উন্নতমানের একজন মানুষ। যারা চেনে জানে তারা আমাকে ভালো মানুষ বললেই আমার অসীম তৃপ্তি।
প্রশ্ন: আপনার পরিবার
উত্তর: আমার মা- শামীম পারভীন মাথার ওপর বটবৃক্ষ হয়ে আছেন। আমার স্ত্রী (এবং প্রিয় বন্ধু) ফাহমিদা হক লেখালেখি করেন, সিসিএন-এর পরিচালক। আমার সন্তান আজমাইন জাহিন সানবিমস্ -এ ক্লাস সিক্স-এর ছাত্র এবং নিজা জেইন সানবিমস্ -এ ক্লাস ওয়ান-এর ছাত্রী।
প্রশ্ন: তৃতীয় মাত্রার বাইরে আপনি কি করেন?
উত্তর: সিসিএন নামে আমাদের একটি মিডিয়া কনসালটেন্সি ফার্ম আছে, আমার সহকর্মীরাই মূলত সেটি চালান। থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর গভার্নন্যান্সস্টাডিজ-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। সিজিএস থেকে সুশাসন, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন বিষয়ে ইংরেজি ভাষায় একটি গবেষণা জার্নাল প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। আগামী অক্টোবরে এটি আলোর মুখ দেখবে আশা করি। আমার বাংলায় একটি সাপ্তাহিক ভিউজ ম্যাগাজিন প্রকাশের ইচ্ছে রয়েছে, সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরুর পরিকল্পনা। এর বাইরে আমি ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট, জার্মানির বিএসএস এবং দিল্লীর এএফজিজি অ্যালামনাই হিসেবে সারা বছরই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সুশাসন নিয়ে আলোচনা ও বিতর্কে অংশ নিই।
News Courtesy: http://ananda-alo.com/