‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যারা বেইমানি করেছে তারা আজ বড় নেতা’
স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে | ২২ আগস্ট ২০১৫, শনিবার
আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেছেন, এক সময় যারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেইমানি করেছে তারাই এখন দলের নেতা, মন্ত্রী, এমপি। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের জনপ্রিয় টকশো ‘গ্রামীণফোন তৃতীয় মাত্রা’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন। সুলতান মনসুর বলেন, একটি চক্র দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিপক্ষে দুটি ধারা সৃষ্টি করে দেশের মানুষকে যে বিভ্রান্ত করছে তাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নষ্ট করার অপকৌশল। কারণ দেশের মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য এদেশ স্বাধীন হয়নি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে যারা সেদিন দেশের জন্য শহীদ হয়েছিলেন তারা নিশ্চয় এমন বিভেদ সৃষ্টির জন্য এদেশ স্বাধীন করেননি। তিনি বলেন, বিএনপির সময় ছিল হাওয়া ভবন আর এখন দেশ-বিদেশে খাওয়া ভবনের নাম শোনা যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার পর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তার প্রতিশোধ নিতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তখনতো আর কেউ এগিয়ে আসেননি। আমরা কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে শপথ ও প্রত্যয় নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলাম। আমি তখন সিলেটের মদন মোহন কলেজের ভিপি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম। কাদের সিদ্দিকীর এই আন্দোলনের আহ্বানের চিঠি পেয়ে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নেমে আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। শপথ নিয়েছিলাম আন্দোলন সফল না করে ঘরে ফিরবো না। এই আন্দোলনের একজন সৈনিক হিসেবে ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে ৪ বছর গারো পাহাড়ের পাদদেশে বিভিন্ন জায়গায় ফেরারি জীবন কাটিয়েছি। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের স্মৃতিচারণ করে বলেন বঙ্গবন্ধুর হত্যা একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যা। সেদিন ইতিহাসের ন্যক্কারজনক ঘটনার সৃষ্টি করে জাতিকে যে কলঙ্কিত করা হলো তা চাইলেই রোধ করা সম্ভব হতো। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীর পরামর্শ অনুযায়ী সিনিয়রিটির ভিত্তিতে খাজা ওয়াসি উদ্দিনকে যদি সেনাপ্রধান করা হতো তা হলে ১৫ই আগস্টের জন্ম হতো না। বঙ্গবন্ধুকে সে সময় কিছু যুবনেতা উৎসাহ যুগিয়েছিলেন কেএম শফি উল্লাহকে সেনাপ্রধান করার জন্য। সেদিন ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহ, তোফায়েল আহমেদ ও আব্দুর রাজ্জাককে ফোন করেছিলেন কিন্তু তারা কেউ এগিয়ে আসেনি। বরং তৎকালীন সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহ বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন স্যার পারলে আপনি পেছনের দেয়াল টপকে পালিয়ে আসেন। তিনি বলেন জিয়াউর রহমান জাতির পিতার পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, জাতির পিতার হত্যাকারী বিপথগামী সেনা সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা ছিল, তাদের কেউই স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি ছিল না। সুলতান মনসুর বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই দেশের চলমান সংকট থেকে দেশকে বাঁচাতে পারে। সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক জনগণ। কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দল নয়। তিনি জনগণের হাতে দেশ শাসনের ভার তুলে দেয়ার আহবান জানান। এমন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে তিনিও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। অভিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ বলেন, যতদিন বাঁচবো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ আর মুজিব কোট নিয়েই রাজনীতি করবো। তিনি ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক সময়ের নানা বিতর্কিত ঘটনার সঙ্গে জড়ানো প্রসঙ্গে বলেন, ছাত্রলীগের কোন দোষ নেই। সব দোষ ওদের পরিচালনার দায়িত্ববান আওয়ামী লীগের লোভী দুর্নীতিবাজ নেতাদের। ওরাই তাদের নষ্ট করছে।
Content Courtesy: http://www.mzamin.com/