টিভি পর্দার জনপ্রিয়তার মাপকাঠি বদলে দিয়েছে টক শো এবং সঞ্চালক
২০০০ সালের পূর্বে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে নারীদের উপস্থিতি মূলত সীমাবদ্ধ ছিল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা আর খবর পাঠেই। পরবর্তী সময়ে নারীরা যুক্ত হন রিপোর্টিংয়ে। বাড়তে থাকে টিভি পর্দায় নারী রিপোর্টারের সংখ্যা। এই মাধ্যমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন মুন্নী সাহা। তার সাহসী রিপোর্টিং টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। পরবর্তী সময়ে টিভিতে নারী সাংবাদিকের সংখ্যাও বাড়িয়ে তোলে। আর রাজনৈতিক গুরুগম্ভীর বিষয়ে টক শো’র ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখে কাজী জেসিনের সঞ্চালনা। অবাক বিষয় হলো—তার সঞ্চালনা একদিকে টিভি দর্শক যেমন বৃদ্ধি করে, তেমনি অনেক নারী সাংবাদিককে সাংবাদিকতার পাশাপাশি টক শো সঞ্চালনায় এগিয়ে যাওয়ারও পথ দেখায়। বিগত দুই দশকে টক শো সঞ্চালনায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়তেই দেখা গেছে। ইদানিং বেশিরভাগ টিভি চ্যানেলের টক শো হোস্টিংয়েই নারীদের দেখা যায়। টক শো সঞ্চালনায় নারীদের অগ্রযাত্রা নিয়ে লিখেছেন খালেদ আহমেদ
বেসরকারি টেলিভিশনের যাত্রা শুরুর পর বাংলাদেশের প্রাইভেট টিভি চ্যানেলগুলো প্যাকেজ নাটক, বাংলা চলচ্চিত্র, ম্যাগাজিন আর বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। যে টিভিতে যত ভালো নাটক প্রচার হতো সেই টিভি চ্যানেল সবচেয়ে জনপ্রিয় ধরা হতো। এখন টিভি পর্দার জনপ্রিয়তার মাপকাঠি বদলে গেছে। কোন চ্যানেল কতটা জনপ্রিয় তা এখন নির্ভর করে কোন চ্যানেলে কেমন ধারার টক শো প্রচার হয়। আর এসব টক শো কারা সঞ্চালন করেন
একুশে টেলিভিশনের যাত্রা শুরুর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের আপামর দর্শকদের মধ্যে খবর দেখার প্রবণতা বেড়ে যায়। শৈল্পিকভাবে খবর উপস্থাপনের মধ্যে দিয়ে শহর থেকে শুরু করে গ্রামে-গঞ্জে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সামিয়া জামান, শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম এবং সামিয়া রহমানের মতো সংবাদ উপস্থাপকেরা। এর কিছুদিন পর শুরু হয় সরকারি এবং বিরোধীদলীয় নেতা, বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্লেষকদের অংশগ্রহণে রাজনীতি বিষয়ক টক শো’র যাত্রা। চ্যানেল আইয়ে শুরু হয় জিল্লুর রহমানের ‘তৃতীয় মাত্রা’।
তৃতীয় মাত্রায় ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের তর্ক কখনো কখনো যে কোনো নাটকের চেয়েও ছিল উপভোগ্য। এখনো তৃতীয় মাত্রার দর্শকপ্রিয়তা একইরকম। চ্যানেল ওয়ান যাত্রা শুরু করলে কাজী জেসিনের টক শো ‘কালকথা’ আলাদা জনপ্রিয়তা পায় তার উপস্থাপনার ধরন ও প্রশ্নবানের কারণে। জেসিনের প্রশ্ন এবং পাল্টা প্রশ্নের সঞ্চালনা দর্শকদের ব্যাপক আকৃষ্ট করতো। ফলে টক শো হোস্ট কাজী জেসিনের প্রতি দর্শকদের দৃষ্টি থাকত সবসময়। তার বিভিন্ন টক শো’য়ে অনেক প্রবীণ রাজনীতিবিদকের কখনো কখনো ভিমড়ি খেতে দেখা গেছে। তথ্য-উপাত্ত নিয়ে রাজনীতিবিদদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার কারণে তার উপস্থাপিত টক শো দেখার জন্য দর্শক অপেক্ষা করতেন। পরবর্তীকালে প্রতিটি চ্যানেলে শুরু হয় টক শো এবং তা গুরুত্ব সহকারে সম্প্রচারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এটিএনবাংলা, এনটিভি, আরটিভি, একাত্তর টিভি, ইনডিপেন্ডেন্ট টিভি, যমুনা টিভি, দেশ টিভি, জিটিভি, বাংলাভিশন, এটিএন নিউজ প্রতিটি চ্যানেল দর্শক ধরতে টক শো আয়োজনে সবরকম প্রস্তুতি গ্রহণ করে। উল্লেখযোগ্য এবং ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠা টক শো’য়ের তালিকা করতে গেলে, চ্যানেল আইয়ে জিল্লুর রহমানের তৃতীয়মাত্রা, একুশে টিভিতে সামিয়া জামানের একুশে সময়, এটিএন বাংলায় কাজী জেসিনের একটেল প্রতিদিন এবং বাংলাভিশনে পয়েন্ট অফ অর্ডার, ইনডিপেন্ডেন্ট টিভিতে খালেদ মহিউদ্দিনের আজকের বাংলাদেশ, ডিবিসিতে নবনীতা চৌধুরীর রাজকাহন, একাত্তর টিভিতে মিথিলা ফারজানার একাত্তর সংযোগ এবং যমুনা টিভিতে কাজী জেসিনের সঞ্চালনায় ২৪ ঘণ্টা দর্শকদের টিভির সামনে বসার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয় ব্যাপক। খবরের পাশাপাশি টক শো’র গুরুত্ব এতটাই যে কখনো কখনো টক শো-ই তৈরি করছে খবরের শিরোনাম। একসময় প্রাইমটাইমে যে সময়গুলোতে প্রচারিত হতো নাটক, এখন সেখানে চ্যানেলগুলোতে সমপ্রচারিত হয় লাইভ টক শো। আর এই টক শো’র কারণে এখন রাজনৈতিক যে কোনো বিষয়ে রাজনীতিবিদের সাধারণ মানুষের মুখোমুখি হতে হয় আগের চেয়ে অনেক বেশি। যে কোনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণও হয় আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন টক শো আলোচনা এবং টক শো উপস্থাপকদের নিয়ে আলোচনার একটা বিষয়। এই টক শো’র ভবিষ্যতের ওপর এখন অনেকাংশে নির্ভর করছে বাংলাদেশে প্রাইভেট টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যত্।
News Courtesy:
https://www.ittefaq.com.bd/print-edition/features/anondo-binodon-/223001/%E0%A6%9F%E0%A6%95-%E0%A6%B6%E0%A7%8B-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82-%E0%A6%B8%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%95?fbclid=IwAR3Wy4_YM3gR7wFYskjyCFJEhAbv_3kS3P8cnb25osBOlW_EFw2Ik0NjER0